পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নে বেঁড়িবাধে স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক পলবোট। মৎস্য চাষিরা ঘেরে পানির উৎস যোগান দিতে উপকুলীয় এ ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিয়ন্ত্রিত বেঁড়িবাধে নিজস্ব উদ্যেগে এসব পলবোট বসানো হয়েছে।
এদিকে পাউবোর মালিকানাধীন বেঁড়িবাধ কর্তন করে পলবোট বসানোর প্রতিযোগিতা চলছে এ ইউনিয়নে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নাম ভাঙ্গিয়ে এসব পলবোট স্থাপনে চলছে বিপুল পরিমান অর্থের লেনদেন। স্থানীয়রা জানায় মালেকপাড়া এলাকার বিএনপি নেতা অলি আহমদ বেঁিড়বাধে পলবোট বসানোর অন্যতম সোর্স। তিনি পাউবোর লোক পরিচয় দিয়ে মৎস্য চাষিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিটি পলবোট ওয়ারি অর্থ। মৎস্য চাষিরা জানায় একটি পলবোট বসাতে টাকা হাকানো হচ্ছে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা। এরই মধ্যে দরদার হারাহারি করে প্রতিটি পলবোটের জন্য টাকা নিচ্ছে ৩০-৫০হাজার টাকা। অলি আহমদ প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। রাজনীতি করেন বিএনপি। নিজে জিয়ার অনুসারি হলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের সময় সরকারি বেঁিড়বাধ কেন্দ্রিক হঠাৎ বিপুল অর্থের মালিক বনে গেছেন এ ব্যক্তি।
গত অর্থ বছরে উজানটিয়া ইউনিয়নে বেঁিড়বাধ সংস্কার বাস্তবায়ন করে পাউবো। ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক নেয় বেঁিড়বাধ নির্মান কাজ ওই অলি। মধ্যম উজানটিয়া, ফেরাসিঙ্গাপাড়া, খান বাহাদুর জামে মসজিদ সংলগ্ন স্থান থেকে মিয়াজি পাড়া হয়ে পুর্ব উজানটিয়া টেকপাড়া পর্যন্ত বেঁিড়বাধ সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। বিপুল অংশে নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। অলি আহমদ ওই কাজ বাস্তবায়ন করছেন।
এ সুবাধে তার নির্মানাধীন কাজে স্থাপিত বেঁিড়বাধে পলবোট বসাতে এখন কন্ট্রাক নিচ্ছে অলি। তাছাড়া নিজেকে পরিচয় দেয় পাউবোর কর্মচারি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায় বেঁিড়বাধ কর্তন করে পলবোট বসানোর এ জঘন্য কাজে পাউবো কক্সবাজারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। বিশেষ করে নির্বাহী প্রকৌশলী, এরিয়া কর্মকর্তা(এসও) ও সুপার ভাইজিংয়ের সাথে জড়িত তারা প্রত্যেকে দায়ি। পাউবো সরকারী প্রতিষ্টান কিন্তু এ সংস্থার প্রতি মানুষের ঘুনা জন্মেছে। দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে পানি উন্নয়ন সর্ম্পকিত এ প্রতিষ্টান।
অলি আহমদ তাদের প্রত্যেককে টাকা দেন। উজানটিয়ায় হুমায়ন ও অলি এ দু’জনই পলবোট বসাতে টাকার কন্ট্রাক নেয়। বেঁিড়বাধ সংস্কারের সময় বাঁেধ যেসব বসতি ছিল প্রত্যেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে হুমায়ন ও অলি আহমদ। যারা টাকা দিয়েছে তাদেরকে রক্ষা করেছে। আর যারা দেয়নি তাদের উচ্ছেদ করেছে। মৎস্য চাষিরা তার মাধ্যমে বিপুল স্থানে সদ্য নির্মিত বেঁিড়বাধ কর্তন করে পলবোট তৈরীর কাজ অব্যহত রেখেছে। মধ্যম উজানটিয়ার দিলদার হোসেন, আহমদ ছফি, গ্রাম পুলিশ সাইফুল ইসলাম, মিয়াজি পাড়া এলাকার আব্দু রহিম, যুবলীগ নেতা মিজবাহ উদ্দিনসহ স্থানীয়রা জানায় টেকপাড়া থেকে ফেরাসিঙ্গা পাড়া পর্যন্ত বেঁিড়বাধে প্রায় ৪০-৫০টি পলবোট বসানো হয়েছে। এসব পলবোট থেকে অলি আহমদ হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। সুন্দরীপাড়া থেকে পুর্ব উজানটিয়া টেকপাড়া পর্যন্ত আরো অধিক স্থানে মৎস্য খামারিরা পলবোট বসিয়েছেন। তারাও অলিকে ম্যানেজ করে কাজ সমাপ্ত করেছেন। ফেরাসিঙ্গা পাড়া, মিয়াজিপাড়া, মৌলভীপাড়া, জৈনুদ্দিন পাড়া, টেকপাড়ার মৎস্য চাষিরা জানান অলি পলবোট বসানোর জন্য মিয়াজিপাড়ার মানিক সওদাগর, জাকের উল্লাহ, মাহতাব, চৌকিদার সাইফুল ইসলাম, বাজারপাড়ার আমির হোসেনসহ আরো অনেক মৎস্য চাষির কাছ থেকে পলবোট বসাতে সহায়তা করে টাকা নিয়েছে। তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০হাজার টাকা করে নিয়েছে অলি আহমদ। শুধুমাত্র ৫হাজার টাকা দিয়েছেন গ্রাম পুলিশ সাইফুল।
স্থানীয়রা জানায় অলির কাছে মৎস্য চাষিরা জিম্মি হয়েছেন। একদিকে সরকারি বেঁিড়বাধ কর্তন। অন্যদিকে পাউবোর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি। এতে করে এ ইউনিয়নের মৎস্য চাষিরা অলির কাছে অসহায় হয়েছেন। পলবোট স্থাপনের ফলে বেঁিড়বাধে মারাত্বক ঝুঁকি ও ফাটল দেখা দেয়। অসংখ্য পলবোট স্থাপন হচ্ছে কিন্তু এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের। ফলে অধিক বেপরোয়া হচ্ছে অসাধু ওই ব্যক্তিরা।
এ ব্যাপারে জানতে অলি আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানায় জ¦লোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ সংস্কারে আমি ব্যক্তিগত উদ্যেগে এগিয়ে আসি। এমপি ও জেলা প্রশাসক বেঁিড়বাধ সংস্কারের জন্য আমাকে নিদের্শনা দেয়। আমি কাজ বাস্তবায়ন করেছি। কিন্তু দু’বছর অতিবাহিত হলেও এখনো প্রায় নয় লাখ টাকা পাইনি। এমপি সব টাকা উত্তোলন করেছেন। জনগনের ভোট ছাড়া এমপি। উন্নয়ন ও জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব কি বুঝবেন। বিকাশ এমপির দ্বারা সমষ্টিক উন্নয়ন আজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছেন। পাউবো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্টান হয়ে গেছে। অলি ও হুমায়ন উজানটিয়ার প্রত্যেকটি পয়েন্টে পলবোট বসিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি আরো জানান জরুরী বরাদ্দে কিছু কাজ হয়েছিল উজানটিয়ায়। মোকতার মেম্বার নামের এক ব্যক্তি কাজ করেছেন সামান্য। কিন্তু সব টাকা উত্তোলন করেছেন। ওই কাজটি চরম অনিয়ন করেছেন তারা। প্রতিবাদ করায় উল্টো আমাকে নিয়ে নানা কুৎসা রটায় তারা।
পাঠকের মতামত: